গাজীপুর জেলার ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ প্রাঙ্গণে গত ১৪ জুন ২০২৫ ইং তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ফরম বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জনাব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন।অনুষ্ঠানটি ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য আয়োজন, যেখানে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক জনাব ফজলুল হক মিলন।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, হুমায়ুন কবির খান, মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক, শাফিন শাহ, রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্যারিস্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী।বক্তব্যের শুরুতেই রিজভী আহমদ স্থানীয় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। নতুন প্রজন্মকে দলের সঙ্গে যুক্ত করে আগামী দিনের রাজনীতিতে নতুন শক্তি গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান শুরু হবে। তখন জনগণের মন থাকবে রোজা ও ইবাদতে। এমন সময়ে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালানো একেবারেই বাস্তবসম্মত নয়। আবার এপ্রিল মাসে থাকবে ঈদের আমেজ। ফলে তখনও নির্বাচনের জন্য কোনো উপযুক্ত পরিবেশ থাকবে না।তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের জন্য চাই একটি সঠিক সময়, চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং চাই জনগণের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা। আমরা বিশ্বাস করি, সঠিক সময়ে, সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হলে বিএনপির জয় নিশ্চিত।গাজীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলুল হক মিলন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে। এখন সময় এসেছে নতুন উদ্যমে রাজপথে নামার। এ সদস্য নবায়ন কর্মসূচি সেই আন্দোলনেরই সূচনা। আমরা গাজীপুর থেকে আবারো বিএনপিকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবো।অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, “জনগণ এখন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে আমরা রাজপথে থাকবো। সদস্য নবায়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করছি।অনুষ্ঠানে তরুণ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বক্তারা বারবার তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। ব্যারিস্টার ইশরাক আহমেদ বলেন, “দেশে যেভাবে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি বাড়ছে, তাতে তরুণদের আর চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের সবাইকে সংগঠিত হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, এই সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের দায়িত্ববোধের জায়গা আরও দৃঢ়ভাবে অনুভব করছেন। দলের প্রতি আনুগত্য ও ত্যাগের মূল্যায়ন হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সবাই।অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যায়। তারা জানান, দীর্ঘ সময় পর গাজীপুরে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি তাদের নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেকেই বলেন, “আমরা আবারও রাজপথে ফিরবো, গণতন্ত্র রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত।”বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সদস্য নবায়ন কর্মসূচি বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে এটি তৃণমূল পর্যায়ে দলের উপস্থিতি ও মনোভাব স্পষ্ট করে।বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বিএনপি তৃণমূলে সাংগঠনিক ভিত্তি আরও দৃঢ় করতে চায়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তা এক ধরনের বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদরা।গাজীপুরে অনুষ্ঠিত এই সদস্য নবায়ন কর্মসূচি বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কেন্দ্রীয় নেতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ এবং দলীয় ঐক্যের বার্তা স্পষ্ট করে দেয় যে, তারা আগামী দিনের রাজনীতিতে শক্তভাবে মাঠে থাকতে প্রস্তুত। নির্বাচনের আগে এমন উদ্যোগ দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করার পাশাপাশি কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

মোফাজ্জল হোসেন, শ্রীপুর প্রতিনিধি