কূটনৈতিক প্রতিবেদক।
জাতিসংঘ কমিটির বৈঠকে বারবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রায় প্রতিটি বৈঠকে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশে গুমের অভিযোগগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ বৈঠকেও আলোচনা করা হয়েছে এসব গুমের অভিযোগ নিয়ে।
গত ১২ মে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর জানায়, গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ ১১টি গুমের অভিযোগ নিয়ে চীন, মিসর, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগের বিষয়টি আলোচনা করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ ২১টি দেশে গুমের নতুন ও পুরনো অভিযোগসংক্রান্ত তথ্য এবং ওই দেশগুলোর আলোচনা করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়াররা গুম, নিখোঁজসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশকে অন্তত ১৫টি চিঠি পাঠিয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গুমের অভিযোগ নিয়ে কাজ করা সংগঠন মায়ের ডাকের সদস্যদের হয়রানির অভিযোগ তোলে ওয়ার্কিং গ্রুপ। বাংলাদেশ সরকার গত ২২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিঠির জবাব দেয়। সেই চিঠিতে গুম ও হয়রানির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি গুমের অভিযোগ করা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্দেশ্য ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।
গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন বাংলাদেশ অধ্যায়ে এ দেশে গুমের অভিযোগকে মানবাধিকারসংক্রান্ত অন্যতম ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গণমাধ্যমগুলো নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে গুম ও অপহরণের অভিযোগ তুলে ধরেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ ব্যক্তি গুম হওয়ার তথ্য দিয়েছে একটি বেসরকারি সংগঠন। নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিরোধী দলের নেতা, কর্মী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে ৮১টি গুমের অভিযোগ তদন্ত করছে। তারা কোথায় আছে বা তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য নেই।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই গুমের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গুমের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে গুম হওয়ার অভিযোগে ওঠে, তাঁদের অনেকেই ঋণ বা বিভিন্ন কারণে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হন। পরে আবার তাঁরা ফিরে আসেন।
অনেকে আবার সরকারকে হেয় করতে গুম হওয়ার কথা বলেন।
মায়ের ডাকের অভিযোগের সূত্র ধরে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠকের সময় বাইরের ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়েছে। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে পাঠানো জবাবে বাংলাদেশ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যখন মায়ের ডাকের অফিসে গিয়েছিলেন, তখন ওই অফিসের বাইরে ভিড় করা ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের কর্মী নন। তাঁরা ‘মায়ের কান্না’ নামের অন্য একটি সংগঠনের সদস্য। প্রতিবছর ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালিত হয়। এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য গুমের মতো বৈশ্বিক অপরাধের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।