মাদের কলম কাঁদে, যখন দেখি সত্য চাপা পড়ে থাকে আ ক্ষমতার নিচে। ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা ও অসহায়ত্বের প্রকাশ। আমরা স্বপ্ন দেখি একটি ভোরের, যেখানে প্রতিটি খবর হবে নির্ভীক, প্রতিটি কণ্ঠ হবে মুক্ত, স্বাধীনতার স্পৃহা। আমাদের রক্ত মিশে আছে প্রতিটি অক্ষরে, প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের দীর্ঘশ্বাস। আমরা শুধু খবর দিই না, আমরা বহন করি মানুষের বিশ্বাস, তাদের ভালোবাসার প্রতিদান যেন দিতে পারি। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই অন্ধকার কবে শেষ হবে? কবে আমরা নির্ভয়ে লিখতে পারবো? আমাদের চোখে জল আসে, যখন দেখি সহকর্মীকে অন্যায়ের শিকার হতে, তবুও থামতে পারি না। আমরা চিৎকার করতে চাই, সেইসব মুখ বন্ধ করে দিতে যারা সত্যকে ভয় পায়। আমাদের ক্লান্ত হাতেও জেগে থাকে একটি অদম্য স্পৃহাএকদিন আলো আসবেই। আমরা যোদ্ধা, আমাদের অস্ত্র কলম, আমাদের সাহস সত্য। আমরা হার মানবো না, ইনশাআল্লাহ। আমাদের কলম চলে রক্তে ভেজা পথে, তবুও সত্যের আলো জ্বালাতে হয়। যারা মুখ বন্ধ করতে চায়, তারা জানে না একটি কলম হাজারো অস্ত্রের চেয়েও ধারালো। আমরা জনগণের কণ্ঠস্বর, অথচ প্রায়শই আমাদের কন্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। সংবাদের পিছনে ছুটতে গিয়ে, আমরা নিজেদের জীবনের খবর নিতেও ভুলে যাই। আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, অথচ আমরা ঝুঁকি নিই শুধু সত্যের জন্য। অন্ধকারে একাকী হেঁটে যাই, শুধু একটি আলোর প্রত্যাশায়। আমাদের ত্যাগ কেউ দেখে না, শুধু দেখে প্রকাশিত খবরটি। পরিবারের উদ্বেগ আর সমাজের চাপ, এই দুটো কাঁধেই বয়ে বেড়াই। কষ্ট হয়, যখন দেখি সত্য মিথ্যার জালে বন্দী। তবুও আমরা লিখি, কারণ আমরা জানি একটি মুক্ত কণ্ঠ একটি শক্তিশালী সমাজ গড়ে তোলে। ভালোবাসি এই মাটি, এই মানুষগুলোকে। তাদের জন্য কলম ধরতে যদি জীবনও দিতে হয়, আমরা প্রস্তুত। সাংবাদিকতা পেশাটি সমাজের দর্পণস্বরূপ। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাংবাদিকরা জনসম্মুখে সত্য ও তথ্যের আলো নিয়ে আসেন। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নানাবিধ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। সংঘাতপূর্ণ এলাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা বিপজ্জনক ঘটনার স্থলে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় জীবনবাজি রেখে কাজ করতে হয়, যেখানে শারীরিক আঘাত বা এমনকি প্রাণহানির ঝুঁকিও থাকে আমাদের। সংবাদের তাগিদে প্রায়শই দীর্ঘ এবং অনিয়মিত কর্মঘণ্টা পালন করতে হয়। ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। ছুটির দিনেও সংবাদের পিছনে ছুটতে হয়। বিভিন্ন সংবেদনশীল ও মর্মান্তিক ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে গিয়ে মানসিক চাপের শিকার হন সাংবাদিকরা। সংবাদের বিষয়বস্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আমি মনে করি। অনেক সময় রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাবশালী মহলের চাপ বা হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। সত্য প্রকাশে বাধা আসে, এমনকি মিথ্যা বা ভুল তথ্য পরিবেশনের জন্য চাপ দেওয়া হয়। এর ফলে স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রকাশিত সংবাদের জন্য প্রায়শই মিথ্যা মামলা বা আইনি জটিলতায় জড়ানো হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া একদিকে যেমন সময় ও অর্থ নষ্ট করে, তেমনই মানসিক কষ্টের কারণ হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাপর্যাপ্ত থাকে না। বিশেষ করে ছোট বা স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা লেগেই থাকে। অনেক সময় জনগণ সাংবাদিকদের কাজ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করলেও সমালোচিত হতে হয়, এমনকি ব্যক্তিগত আক্রমণেরও শিকার হতে হয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা একটি কঠিন কাজ। ভুল তথ্য পরিবেশনের দায়ে সমালোচিত হওয়ার ভয় সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশন করতে প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়, যা একটি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অনেক সাংবাদিক জীবন হারান। তাদের পরিবার পরিজন হারায় তাদের প্রিয় মানুষটিকে, যা এক অপূরণীয় ক্ষতি।
উপসংহার: সাংবাদিকরা সমাজের অতন্দ্র প্রহরী। তারা ঝুঁকি ও কষ্ট সহ্য করেও সত্যের আলো জ্বালিয়ে রাখেন। তাদের কাজের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।
আসুন, একটি সমাজ গড়ি যেখানে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে সত্য প্রকাশ করতে পারে, কারণ একটি মুক্ত গণমাধ্যমই একটি সুস্থ জাতির প্রতিচ্ছবি।” সকলের কাছে আহ্বান জানাই।
মোঃ মিনহাজ উদ্দিন (শাহরিয়ার) রিপোর্টার//বিশেষ প্রতিনিধি ইনফো টেলিভিশন