সাদ ও জুবায়েরপন্থীদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মধ্যেই চলছে টঙ্গীতে জোর ইজতেমা

টঙ্গী থেকে মোঃ শাহজালাল দেওয়ান: গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ তীরে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমায় চতুর্থ দিনের আম বয়ান চলছে,৩ ডিসেম্বর এর সমাপ্তি ঘটবে। বৃহস্পতিবার জোড় ইজতেমায় প্রায় ২ লাখ মুসুল্লি উপস্থিত হয়েছেন। প্রথম পর্বের জোর ইজতেমার আয়োজন করেন শুরায়ী নেজাম (মাওলানা যোবায়ের অনুসারীরা)। এরপর দ্বিতীয় পর্ব মাওলানা সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমা আগামী ১৯ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বরে শেষ হবে। জোড় ইজতেমা হলো তাবলিগ জামাতের একটি সমাবেশ। বিশ্ব ইজতেমার আগে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, তাবলিগ জামাতের সব সাথীই জোড় ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। সাধারণত তিন চিল্লার সাথীদের নিয়েই এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।এবারের বিশ্ব ইজতেমা ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতার মাঝেও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাবলিগ জামাতের দুই প্রধান শিবির, সাদ কান্ধলভি এবং জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের মধ্যে মতবিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ইজতেমার পরিবেশে প্রভাব ফেলছে। বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। প্রতি বছর মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, দ্বীনি শিক্ষা এবং ইসলামের শান্তির বার্তা প্রচারের লক্ষ্য নিয়ে এটি আয়োজন করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাদপন্থী এবং জুবায়েরপন্থীদের এই বিভাজন ইজতেমার আয়োজন ও কার্যক্রমে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় মাওলানা সাদপন্থী ও মাওলানা জুবায়েরপন্থী দুই গ্রুপই বিচারের দাবি জানিয়েছে। জুবায়ের পন্থীদের দাবি,তাদের অন্তত ৫ হাজার সাথী সেদিন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। আর এই ঘটনায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকার জড়িত ছিল। তারা সাদপন্থীদের বিচারের দাবি জানান।
অপরদিকে সাদপন্থীদের দাবি, মিথ্যাচার করে জুবায়েরপন্থীরা খুনিদের আড়াল করা অপচেষ্টা করছে। জুবায়েরপন্থীদের নৃশংস হামলায় দুজন মূলধারার সাথীর মৃত্যু হবার পরেও গণমাধ্যমের সামনে তাদের মিথ্যাচার দেখে সাদপন্থীরা হতবাক ও বিস্মৃত। তারা এও দাবি করেন এই ঘটনায় জুবায়েরপন্থীদের সঙ্গে হেফাজত ইসলাম পরক্ষো মদদ ছিল। সরকার যাতে এবিষয়ে সুষ্ঠু বিচার করে সে দাবিও জানিয়েছেন সাদপন্থীরা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে শুরায়ী নেজামী জুবায়েরপন্থীদের সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আমানুল হক বলেন,২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর সাদপন্থীরা যে বর্বর হামলা চালিয়ে তাবলিগের হাজার হাজার নিরীহ সাথী, আলেম-উলামা ও মাঠ প্রস্তুতির কাজে নিয়োজিত মাদরাসার ছাত্রদের আহত করে-সেদিন সাদপন্থীরা ময়দানের পূর্ব পাশে তাদের নৃশংস আক্রমণে আমাদের অন্তত পাঁচ হাজার নিরস্ত্র সাধারণ মুসল্লি তাবলিগের সাথি ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র–শিক্ষককে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। তারা লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তাদের থেকে টঙ্গী ময়দানের পশ্চিম উত্তর কোনে অবস্থিত কোমলমতি ছাত্র–শিক্ষক কেউই রেহাই পায়নি। আমরা বলতে পারি এই ঘটনায় আওয়ামী সরকার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। আমরা চাই এই সরকার এই হামলার যথাযথ তদন্ত করে দ্রুত ন্যায়বিচার করবে।তিনি বলেন, আজকের বৈষম্যবিরোধী প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি হলো,সারা দেশ থেকে কীভাবে হাজার হাজার সাদপন্থী সন্ত্রাসী ঢাকায় জড়ো হলো? এবং কীভাবে টঙ্গীতে একত্র হলো? তা আপনারা তদন্ত করে খতিয়ে দেখুন,প্রকৃত সত্য জাতির সামনে পেশ করুন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করুন।
অপরদিকে রোববার (১ ডিসেম্বর) তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ সাদপন্থীর মিডিয়া সমন্বয়ক সায়েম গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন টঙ্গীর ময়দানে তাবলীগ ও মাদরাসার ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে জুবায়েরপন্থীদের নৃশংস হামলায় দুজন মূলধারার সাথীকে হত্যা করার পরেও গনমাধ্যমের সামনে তাদের মিথ্যাচার দেখে আমরা হতবাক ও বিস্মৃত। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে সত্যকে আড়াল করে তারা যে মিথ্যাচার করেছেন তার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সেদিন ১লা ডিসেম্বর ২০১৮ সালে টঙ্গীর ময়দানে মাদরাসার ছাত্রদের নৃশংস হামলায় ঘটনাস্থলে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী একজন তাবলীগের সাথী মারা যান। পরবর্তীতে ১মাস পর হাসপাতালে আহত আরেকজনে মূলধারার তাবলীগের সাথীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন সাথী ও মাদরাসার ছাত্র নিহিত না হওয়ার পরেও মূলধারার তাবলীগের সাথীদের নিহত হবার ঘটনাকে নিজেদের লোকবলে চালিয়ে দেয়ার লাশের এই রাজনীতি কতোটা ঘৃনীত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু জুবায়েরপন্থীরা বরাবরের মতোই এই দুজনকে তাদের লোক বলে চালিয়ে খুনীদের আড়াল করতে হীন ষড়যন্ত্র করে আসছে। এছাড়া মাঠে ময়দানে ও ওয়াজ মাহফিলে অসংখ্যা ছাত্র হত্যার কল্পকাহিনি এরা বলে মানুষকে উস্কে দিচ্ছে। সেদিন মাঠের পাশের টয়লেটের ছাদ থেকে তাবলীগের সাথীদের উপর মাদ্রাসার ছাত্ররা ইট পাটকেল দিয়ে বৃষ্টির মতো হামলা চালালে হাজারো তাবলীগের সাথী গুরুতর আহত ও দুজন সাদ কান্ধলভীর অনুসারী নিহিত হন। ।
তিনি আরও বলেন আপনারা জানেন, আমরা বিশ্বের দু’জন শীর্ষ আলেম পাকিস্তানের মুফতী তকী উসমানী ও ভারতের দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানীর মধ্যস্থতায় তাদের সকল মিথ্যাচার এর উপর সংবাদ সম্মেলন করে ওপেন চ্যালঞ্জ করেছি। ধর্মীয় সংঘাত উস্কে না দিয়ে বসে আলেচনা ও মিমাংসার প্রস্তাব করে দেশের পরিবেশকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখার অনুরোধ সত্তেও তারা বরাবরের মতোই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরিবপশকে অস্থিতিশীল কপন করতে চায় তা খাতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের বিরোধ বিগত কয়েক বছর ধরে সংগঠনের কার্যক্রম ও ইজতেমার পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। শান্তির বার্তা প্রচারের জন্য পরিচিত এই সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের এই বিরোধ কেবল ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে না, বরং তা ইজতেমার মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে তাবলিগ জামাত তার ঐক্য পুনরুদ্ধার করবে এবং ইসলামের শান্তির বার্তা প্রচারে মনোনিবেশ করবে।

     More News Of This Category

Our Like Page

পুরাতন খবর

MonTueWedThuFriSatSun
      1
2345678
23242526272829
3031     
    123
       
 123456
28293031   
       
      1
2345678
30      
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31