সিংড়ায় বিএডিসির অপরিকল্পিত খাল খননে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

কাবিল উদ্দিন কাফি,সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ

নাটোরের সিংড়ায় পাটসাঐল-শৈলমারী খাল খননে অনিয়ম এবং অপরিকল্পিত খাল খননের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের উপর খাল খনন করে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। খাল খননের ফলে কৃষি জমির উপর প্রভাব পড়েছে।

প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে খালের পারে কৃষকেরা সেচ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে খালের নকশা অনুযায়ী খনন কাজ না করার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া কৃষকদের জমিতে মাটি ফেলে জমির আবাদ নষ্ট এবং ফসল ঘরে তোলার সুবিধা ও বঞ্চিত করা হয়েছে। যার জন্য খাল খনন কৃষকের গলার কাটা হয়েছে। সেখানে বরেন্দ প্রকল্পের গভীর নলকুপও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা আবুল কাসেমের লীজকৃত জমিতে খাল খননেরও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তাদের নিজস্ব জমির খালে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল দলবল নিয়ে দখল করে মাছ ধরতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের আওতায় পাটসাঐল-শৈলমারী খাল খনন করে বিএডিসি। আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী সমর্থিত স্থানীয় সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম, ১২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহম্মদ আলী, সহযোগী ফুলচান আলী, ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে খাল খনন করা হয়। খালের দুই ধারে কৃষি জমির উপর মাটি ফেলে সেই মাটি বিক্রির প্রস্তুতি নেয় ঐ প্রভাবশালী মহল। বন্যা হওয়ায় মাটি বিক্রিতে বিলম্ব হয় এবং ৫ আগষ্টে আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর ১২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান জাহিদ এর আপন ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফুল খাল দখলে নেওয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত। একই পরিবারের দুজন দুই সময়ে লিড নিয়ে গ্রামে অরজাকতার সৃষ্টি করছে।

আবুল কাসেমের পুত্র মিলন দাবি করেন, খাল খননের নামে ফ্যসিবাদের সময়কালে তাদের জায়গা দখলের অপচেষ্টা করা হয়। ১৩৮ দাগের ৪ বিঘা জমি আমরা সরকার থেকে লিজ নিয়েছি। জায়গা আমাদের। যা আমরা ৪৫ বছর থেকে ভোগ দখল করে আসছি। আমাদের নামে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নামজারি রয়েছে। এটি জানার পরেও তারা অন্যায়ভাবে নিজস্ব জমির উপর খাল খনন করে। এতে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করে ১২ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান জাহিদ। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদের পতন হলে ১২ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান জাহিদ এর আপন ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আমাদের খাল দখল নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। সত্যিকার অর্থে এক ভাই আওয়ামী লীগের সময় জমি দখল করে খাল খনন করে এবং এখন অপর ভাই খাল দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতারা একাধিকবার উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করেন এবং উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাগণের সমন্বয়ে একটি টিম আমাদের নামের কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য ভূমি অফিসে যান এবং কাগজপত্র সঠিক পান। তদন্তপ্রেক্ষিতে অন্যায়ভাবে অন্যের খাল দখল না করার জন্য উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুলকে নির্দেশ দেন। এরপরেও গত ১৭ ডিসেম্বর আশরাফুল অন্যায়ভাবে খালে মাছ ধরতে যাওয়ায় মাছ মারা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

মিলন আরও বলেন, সেখানে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাগণের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে উপজেলা ছাত্রদলের একটি মহলের ছত্রছায়ায় লাঠিসোটা নিয়ে মাছ মারতে যায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফুল, ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মোস্তফা, ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্টু, ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি খোরশেদ আলম, পৌর শ্রমিক দলের নেতা রবিউল, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মেরাজুল ইসলাম ও তার লোকজন। যাতে বিধিনিষেধ অমান্য করা হয়েছে।

ছাত্রদল নেতা আশরাফুল বলেন, সরকারি খালে মাছ ধরার অধিকার সবার, খাল কখনো কেউ লিজ নিতে পারে না। আমরা খালে মাছ মারতে গেলে কাসেমের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে।

স্থানীয়রা জানান, এই মাঠে আ: মান্নান তার ৩০ বিঘা জমি আবাদ করেন। এছাড়া জুয়েল ২ বিঘা, রজব আলী ২০ বিঘা, বদিউজ্জামান ২০ বিঘা, আবু তালেব ২০ বিঘা, আ: লতিফ ১৫ বিঘা, আ: সালাম ১০ বিঘা, জিন্নাহ ৩০ বিঘা, সের আলী ১৫ বিঘা, জয়নাল ৩০ বিঘা, আ: হালিম ১০ বিঘা, মোস্তফা ১৫ বিঘাসহ অর্ধশত কৃষক আবাদ করেন। যারা আজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এতদিন তারা মুখ খুলতে পারেননি। তারা সেচ সুবিধা বঞ্চিত, খালের দুধারে মাটি পড়ে থাকায় চলাচলের রাস্তা নাই, কোনো যানবাহন যেতে পারে না। এতে আবাদে ব্যয় দ্বিগুণ বেড়েছে। এজন্য অপরিকল্পিত খান খননকে দায়ী করছেন তারা। এজন্য খালের দুপারে মাটি অপসারণ, খালের উপর দুটি ব্রীজ স্থাপন, চলাচলের রাস্তা সমতল করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

বিএডিসি সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলার ভু-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনিশা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১২০০ মিটার খাল খননের কাজ হাতে নেয়। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১০ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা।

বিএডিসি সিংড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মানিক রতন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষকদের সুবিধার্থে খাল খনন প্রজেক্ট বিএডিসির আওতায় করা হয়। সিংড়া উপজেলায় প্রায় ১৮৬ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। শৈলমারী খালের কিছু অংশ লিজ নেওয়া জমির কথা শুনেছি ও জেনেছি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।

     More News Of This Category

Our Like Page

পুরাতন খবর

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
3031     
    123
       
 123456
28293031   
       
      1
2345678
30      
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31